Recent News Post of ই-ব্লগ eBlog eProthomAlo

Monday, April 28, 2014

অভিবাসীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'অভিবাসীকে শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম বা উত্পাদনের উপাদান হিসেবে দেখলে চলবে না। তাঁদের মানুষ হিসেবে গণ্য করতে হবে। অন্যান্য নাগরিকের মতো তাঁদের জন্যও সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।'

আজ সোমবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে '২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় অভিবাসন-সংক্রান্ত দুই দিনব্যাপী বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞ সভায়' প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে ওই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খবর বাসসের।

২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় অভিবাসন ইস্যুকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেক অভিবাসীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপাদানের পরিবর্তে একজন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমাজ এবং অর্থনীতি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং উত্পাদন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মৌলিক সেবার চাহিদা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে; যা বৈশ্বিক মানব স্থানান্তরের গতিধারাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। পাশাপাশি অভিবাসী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার মতো বিষয়গুলো জোরালো হচ্ছে।

বাংলাদেশের মতো পরিবেশ নাজুক এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো এসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য সব উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই জনগণকে রাখতে হবে। জনগণের মর্যাদা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। যেসব মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এটা সমানভাবে প্রযোজ্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক প্রতিনিধি স্যার পিটার সুথারলেন্ডর একটি ভিডিওবার্তা অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়।

২০১৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জনমিতি-সংক্রান্ত 'বৈশ্বিক নেতৃত্ব' বৈঠকে শেখ হাসিনা উন্নয়নের ওপর অভিবাসনের প্রভাব বিষয়ে যে মতামত দিয়েছিলেন তার উল্লেখ করেন। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈশ্বিক জনসংখ্যার পরিবর্তন এবং এর ফলজনিত চ্যালেঞ্জ কীভাবে কল্যাণকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে এবং পাশাপাশি অভিবাসন এবং স্থানান্তরের সুফল কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে তখন তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে ২০১৫-পরবর্তী এজেন্ডায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজিএসের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক খাতে, বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও ৬ শতাংশেরও বেশি হারে আমাদের জিডিপি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। অতিদরিদ্রের সংখ্যা ২৯ শতাংশে হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতোমধ্যেই ৩১ শতাংশ অর্জন করেছি।'

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছেন, অভিবাসন-প্রক্রিয়াকে আরও নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক এবং কল্যাণমূলক করা প্রয়োজন। তিনি বলেন,  'আমাদের আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে হবে অভিবাসীদের অধিকারের বিষয়টি। উত্স এবং গন্তব্য উভয় দেশে অভিবাসন এবং অভিবাসীকর্মীদের ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে হবে। আমাদের জনগণকে বলতে হবে, অভিবাসন সব সমাজের জন্যই একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।'

এ ক্ষেত্রে তিনি ছয়টি বিষয়ের প্রস্তাব করে বলেন, এগুলো সম্ভাব্য লক্ষ্য এবং সূচক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সেগুলো হলো: প্রথমত, ২৫ কোটির কাছাকাছি অভিবাসী আজ বিশ্বব্যাপী কাজ করেন, বসবাস করেন অথবা ভ্রমণ করেন। নিজ দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে তাঁরা অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। দেশে ফেরার সময় তাঁরা কাজ ও জীবনের যেসব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং ধ্যান-ধারণা নিয়ে ফিরে আসছেন, তার মাধ্যমেও নিজ দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

দ্বিতীয়ত, মানুষের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেই হয়। টেকসই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষের অধিক হারে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগতভাবেই গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যার দৃশ্যপট পরিবর্তন এর অন্যতম কারণ। একজন অভিবাসীকর্মীকে উন্নয়নের অনুঘটক হিসেবে দেখতে হবে এবং প্রক্রিয়াটিতে প্রত্যেক ব্যক্তির মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।

তৃতীয়ত, একজন অভিবাসীকর্মী যখন বিদেশে যান, তখন তাঁকে সামাজিক-আবেগিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বিশেষ করে অভিবাসী নারী এবং বালিকাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি করে প্রযোজ্য। নিজ সমাজেও তাঁদের বিভিন্ন ধরনের ভুল ধারণার মুখোমুখি হতে হয়। তাঁদের জন্য আরও সুন্দর এবং সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

চতুর্থত, বাংলাদেশের মতো দেশে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত যুব জনসংখ্যার কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকে এই প্রশিক্ষণযোগ্য যুব জনশক্তিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে এশিয়া এবং আফ্রিকার যুব জনসংখ্যাকে জ্ঞান ও দক্ষতা বিষয়ে প্রস্তুত করতে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে আমরা এই বিশালসংখ্যক যুবক এবং যুব মহিলার দ্রুত প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

পঞ্চমত, ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনায় অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের সীমাবদ্ধতা এবং সম্পদের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সম্পদ ও সামর্থ্যের জোগান দিয়ে যাচ্ছি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহায়তা প্রদানের জন্য উন্নত দেশগুলোকে আরও বেশি করে তাদের অর্থ-জ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

২০১২ সালে রিও-তে অভিবাসীদের সব ধরনের অধিকার প্রদানের বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় ঐকমত্য পোষণ করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রত্যেক অভিবাসী পুরুষ ও নারীর অধিকারকে সমর্থন দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের এমন উপায় চিহ্নিত করার আহ্বান জানান, যাতে অভিবাসন দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখতে পারে, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়, অসমতা কমায় এবং বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক হয়। তিনি বলেন, অভিবাসন-প্রক্রিয়ায়, অভিবাসীদের বিশেষ করে নারী ও বালিকাদের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অভিবাসী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য গুণগত মৌলিক শিক্ষা, ভকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

এ ছাড়া উত্স ও গন্তব্য উভয় দেশে যাতে তাঁরা অবদান রাখতে পারেন, সে জন্য অভিবাসীদের সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক বিষয়ে সহায়তা প্রদান এবং অর্থ প্রেরণসহ তাঁদের সব ধরনের খরচের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং টেকসই ও সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সঙ্গে এগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসব বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আগামী ১৫ বছরে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজিএস সব দেশের জন্য একটি দূরদর্শী এবং বৈপ্লবিক লক্ষ্য হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করেন, এগুলো সর্বজনীন এবং প্রতিটি দেশের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ও চাহিদা বিবেচনায় সমস্যার সামগ্রিক সমাধান প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment